অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সার্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ কর্মবিরতিতে গেলেন। এদিকে ১ জুলাই থেকে ৪ জুলাই অর্ধদিবস ও আগামী ৭ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতির কর্মসূচি দিয়েছে বাংলাদেশ আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন যাবৎ দাবি জানিয়ে আসলেও সর্বজনীন পেনশন স্কীম বিধিমালা-২০২৩ এর প্রজ্ঞাপন হতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার না করে উপরন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতি/পদোন্নয়ন সংক্রান্ত অভিন্ন নীতিমালা সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন ।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অভিন্ন নীতিমালা সুপারিশ করার পূর্বে বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনা ও খসড়া উপস্থাপনের আশ্বাস নিয়েছিলো। একই দেশে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম থাকতে পারে না উল্লেখ করে কর্মকর্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিমালা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাদের যে সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সার্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনকে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক দাবী করেছেন তারা।
সাংঘর্ষিক ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন সিকৃবি অফিসার পরিষদের সভাপতি ডাঃ ছায়াদ মিয়া। তিনি বলেন “ আমরা এই বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিম মানিনা। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আজ অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছেন। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের স্বার্থে এই সকল সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানাচ্ছি।”
উল্লেখ্য, আজ সোমবার (১লা জুলাই) থেকে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমের’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে গেলো।
সিকৃবিতে আজ কোন ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। কর্মকর্তারা ১১টা থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে এবং শিক্ষকরা ১২টা থেকে কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে এবং দাবী আদায়ের জন্য বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করছে। শিক্ষকরা সকাল থেকেই নিজ নিজ অনুষদের সামনে ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত রেখে আন্দোলন করছে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন তিন মাসেরও অধিক সময় ধরে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী কর্মবিরতি, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচির মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয় এবং ৩০ জুন থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে।
সিকৃবি শিক্ষক সমিতি সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ ছফি উল্লাহ ভূঞা বলেন, ‘আমরা আশা করি সরকার অনতিবিলম্বে এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে, যাতে আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারি। অন্যথায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।’
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৩ মার্চ প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে এর বিরুদ্ধে সরব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন। এতদিন কর্মবিরতি পালিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষাগুলো এর আওতার বাইরে ছিল। কিন্তু আজ থেকে যে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হচ্ছে, সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষাসহ দাপ্তরিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন শিক্ষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ।