ফজলুর রহমান,রংপুরঃ রংপুরে অঞ্চলে শুরু হয়েছে আলুর বীজ রোপণের মৌসুম। আলু বীজের দাম বাড়ায় সৃষ্টি হয়েছে নানা সঙ্কট। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা। জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৩ হাজার ১শ ৮০ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩শ ৫৪ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত মৌসুমের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আলুর বীজ। সেই সঙ্গে বেড়েছে সার ও কীটনাশকসহ শ্রমিকের খরচও। আলুর আবাদের খরচ বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন আলুচাষিরা।
গত বছর সরকারি বীজ বিক্রি করা হয়েছিল প্রতি কেজি ২৮-৩০ টাকা। এ বছর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৬০ টাকা। বেসরকারি কোম্পানিগুলো গত বছর বীজ বিক্রি করেছিল প্রতি কেজি ৪০ টাকা, এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা দরে। সে হিসেবে হেক্টর প্রতি গত বছর আলু বীজে খরচ ছিল ৭০-৮০ হাজার টাকা। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায়।
পীরগাছা উপজেলাধীন পারম্নল ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় কৃষকদের আলু রোপণ করতে দেখা গেছে। আমন ধান কাটা ও মাড়াই এখন পুরোদমে চলছে এসব এলাকায় ফলে অনেকে আলু রোপন শুরম্ন করেছেন। এলাকাগুলো ঘুরে কথা হয় নাগদাহ এলাকার কৃষক আব্দুর রহিম এর সাথে। আলু রোপণকালে আব্দুর রহিম বলেন, প্রতি বছর ৪-৫ একর জমিতে আলু চাষ করি। তবে এ বছর মনে হয় হবে না। কারণ গত বছরের চেয়ে এ বছর আলুর বীজের দাম অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও নাগালের বাইরে। যে কারণে এবার এক একর জমিতে আলু রোপণ করছি।
আব্দুর রহিম এর পাশাপাশি ওই এলাকার আলু চাষি বাবুরাম, শাহজাহান, কেরামত আলীর সাথে কথা বলে জানা যায় সরকারি, বেসরকারি ও কৃষক পর্যায়ে তিন ¯ত্মরেই বেড়েছে আলুর বীজের দাম। গত বছর যে বীজ আলু সরকারের কাছ থেকে ২৮-৩০ টাকায় কৃষকরা পেয়েছে সেই বীজ আলুর দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। বেসরকারি বীজের দাম আরও বেশি।
পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের সাহেব বাজার এলাকার কৃষক রাশেদুল ইলাম বলেন, গত বারের চেয়ে এবারে সব রকমের সারের দাম বেশী। প্রতিবারের ন্যায় এবারো আগাম আলু আবাদ শুরম্ন করেছি। আশা করি আবাদ ভালো হবে। তিনি আরো বলেন, এবারে সারের দাম বেশি হওয়ায় বিঘা প্রতি আগাম জাতের আলু রোপণে খরচ হয় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আগাম আবাদে আগাম বাজার ধরতে পারলে আলুর দাম বেশী পাওয়া যাবে। এতে বিঘা প্রতি আলু বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে মোটা অংকের লাভ থাকবে।
বিএডিসি রংপুর অঞ্চলের বীজ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন, এবার বীজের দাম বাড়ায় আলু চাষে আগ্রহ কমেছে কৃষকদের। গতবছর এসময় যে পরিমাণ বীজ আলু বিক্রি হয়েছিল এ বছর তা হয়নি। বীজের দাম বাড়ায় কৃষকরা চিšত্মায় পড়েছেন।
বিএডিসির রংপুরের উপ-পরিচালক আব্দুল হাই বলেন, খাবার আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে বীজ আলুর দাম। কারণ বাজারে খাবার আলু যে দামে বিক্রি হচ্ছে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই দাম নির্ধারণ করা হয়।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আফতাব হোসেন বলেন, এবছর বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের আলু উৎপাদনের খরচ অনেকটা বেড়ে গেছে। তাই আমরা কৃষকদের অধিক ফলনশীল জাতের আলু চাষের পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা বাজারে এখন আলুর যে জাতগুলো প্রচলিত আছে তার ফলন অনেক কম। তাই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা সানসাইন, সেভেন, সেভেন ফোর সেভেনসহ বেশকিছু উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রংপুর কৃষি অঞ্চলে আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৭ হাজার ৩শ ২৭ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এসব জমিতে ভিত্তি বীজ আলুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭৮ মেট্রিক টন।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, এবার জেলায় মোট ৫৩ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩শ ৫৪ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।