মাছি পোকা দ্বারা পরিপক্ব আম আক্রান্ত হয়ে থাকে। ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসাপাতসহ বিভিন্ন জাতের গাছে আম পাকা থাকা অবস্থায় এ পোকা আক্রমণ করে। সাধারণত এ মাছি পোকা কুমড়া জাতীয় বিভিন্ন ফসলে যেমন- লাউ, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, কাঁকরোল, করলা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি ফসলে বেশি আক্রমণ করে থাকে। ফলের মধ্যে আম, ডুমুর, লিচু, পেঁপে, পেয়ারা, বড়ই, এভোকেডো, পিচ ইত্যাদি ফলে এ মাছি পোকা দেখা যায়।
ক্ষতির প্রকৃতিঃ
স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ার অঙ্গের সাহায্যে গাছে থাকা অবস্থায় পাকা আমের গা চিরে ডিম পাড়ে অর্থাৎ খোসার নিচে ডিম পাড়ে। আক্রান্ত স্থান থেকে অনেক সময় রস বের হয়। বাইরে থেকে দেখে কোনটি আক্রান্ত আম তা ঝুঝা যায় না। এ পোকার কীড়া পাকা আমের মধ্যে প্রবেশ করে শাঁস খেয়ে ফেলে। এতে ফল পচে যায় ও ঝরে পড়ে। আক্রান্ত আম কাটলে ভেতের সাদা রঙের অসংখ্য কীড়া দেখা যায়। সাধারণত এ পোকা আমের ওপর এবং নিচ উভয় অংশে আক্রমণ করে। পোকার আক্রমণ বেশি হলে গাছের সব আম খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাঃ
– মাছির সমস্ত কীড়া পোকা ধ্বংস করার জন্য আক্রান্ত সব ফল মাটির ০.৫ মিটার গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে।
– পিউপা যাতে সূর্যের আলোয় মুক্ত হয় সেজন্য জমি নিয়মিত চাষ দিন এবং মৃত পিউপা মাটিতে পুঁতে ফেলুন।
– আক্রান্ত স্থান থেকে সংক্রামিত ফল অন্য স্থানে স্থানান্তর করবেন না।
জৈব নিয়ন্ত্রণঃ
ফসল সংগ্রহের পরে তাপবাহিত শোধন (গরম বাষ্প বা গরম জল) বা পরিবহনের সময় ও পরে শীতার্ত শোধন দূষণের ঝুঁকি কমায়। বাড়ন্ত ফল প্রতিরক্ষার জন্য মোড়ক ব্যবহার করুন বা ফেরোমোনের ফাঁদ বা প্রোটিন ফাঁদ (যেমন মিথাইল ইউজিনল যা পুরুষ মাছি পোকাকে আকর্ষণ করে) ব্যবহার করুন । ওসিমাম স্যাংটাম ( তুলসি ) পাতার নির্যাস, যার মধ্যে ইউজিনল, বিটা-ক্যারিওফিলিন এবং বিটা-এমেনি রয়েছে, এগুলো তুলোর প্যাডে স্থাপন করলে ০.৮ কিলোমিটারের দূরত্ব থেকে তা মাছিকে আকর্ষণ করে। স্পিনোস্যাডের সাথে মাখানো এসব উপাদান ফলের বাগানে ছিটিয়ে দিলে মাছি পোকাকে আকর্ষণ করে, ফলে এভাবে দমন করা যায়। নিম বীজের নির্যাস মাছি পোকার ডিম পাড়া প্রতিরোধী হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণঃ
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন । ফেনিট্রথিয়ন (জেনেটিকার- কৃষক বন্ধু) জাতীয় কীটনাশক ফলের মাছি কীড়া পোকার বিরুদ্ধে মাঝারিভাবে কার্যকর। নির্দিষ্ট অবস্থান স্থাপনের জন্য মাছি দমনে স্প্রে ফাঁদের সঙ্গে প্রোটিন মিশ্রিত করতে হবে।
লেখকঃ সমীরন বিশ্বাস
কৃষিবিদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ