আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় গরু পালনে ঝুঁকলেও গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা রংপুরের নারী খামারি রাজিয়া বেগম। স্বামী বাজারে খোলা আকাশের নিচে বসে শুটকি বিক্রি করেন। অনেক আশা নিয়ে গরু পালন শুরু করলেও গরুর খাদ্যের দাম বাড়ায় খামার টিকিয়ে রাখতে কষ্ট হচ্ছে তার। বাধ্য হয়েই ৪টি গরু বিক্রি করে দেন তিনি।
জানা যায়, নারী খামারি রাজিয়া বেগম রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। সংসারে অনেক অভাব অনটন যাচ্ছে তার। তার সন্তানরা পড়াশোনায় ভালো বলে তিনি তাদের পড়াশোনা বন্ধ করেননি। সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে গরু পালন শুরু করেছিলেন। বর্তমানে গোখাদ্যের দাম বাড়ার কারণে তার পক্ষে আর খামার টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। তাই তিনি বাধ্য হয়ে তার ১০টি গরুর মধ্যে ৪টি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। বাকি গরু গুলোকে পালন করতে না পারলে সেগুলোও বিক্রি করে দিবেন।
নারী খামারি রাজিয়া বেগম বলেন, অভাব অনটনের সংসারে আমার স্বামী এলাকার বাজারে খোলা আকাশের নিচে বসে শুটকি বিক্রি করেন। সংসারের আর্থিক সমস্যা দূর করতে ঋণ করে ৫ টি গরু কিনে পালন শুরু করি। তারপর ধীরে ধীরে গরুর সংখ্যা বেড়ে ১০টি হয়। যার মধ্যে ৫টি গাভী ছিল। সংসারও উন্নতির দিকে উঠতে থাকে। আমার ছোট এই খামারে গাভীর দুধ বিক্রি করে সংসরা চলে যেত।
তিনি আরো বলেন, গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে আমার খামারের স্বপ্ন ভেঙে যায়। গরুর খাবার খরচ চালাতে না পেরে বাধ্য হয়ে আমার ১০টি গরুর মধ্যে ৪টি বিক্রি করে দিয়েছি। বর্তমানে আমার খামারে ৬টি গরু আছে। এইগুলো কতদিন পালন করতে পারবো জানিনা।
শুধু রাজিয়া নয় এই এলাকার আরো ১০-১৫ জন খামারীর একই অবস্থা। এতে মিঠাপুকুর উপজেলায় গরু পোষা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। দ্রব্যমূলের দামতো বাড়ছেই সেইসাথে দফায় দফায় গোখাদ্যের দাম বাড়ায় খামারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গরু পুষে লোকসান হওয়ার কারণে অনেকেই খামার বন্ধ দিয়েছেন।
উপজেলার মামুদপুর গ্রামের গরুর খামারি শাহিন মিয়া বলেন, গরুর খাবারের দাম বাড়লেও বাড়েনি দুধ ও গরুর দাম। আগে প্রতি লিটার দুধ ৫০ টাকা বিক্রি করতাম এখনও সেই ৫০ টাকায়ই বিক্রি করছি। গাভিকে ঘাস-খড় ছাড়াও ফিড, ভুসি ও ক্যালসিয়াম নিয়মিত খাওয়াতে হয়। এই ভাবে নিয়ম করে না খাওয়ালে ঠিকমতো দুধ পাওয়া যায় না। তাই এখন আর গরু পালন করে পোষাচ্ছে না।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আনারুল মিয়া বলেন, খামারিরা ধানের কুড়া, গমের ভূষি, চালের খুদ, ডালের খোসা পাশাপাশি খড় ও ঘাস খাওয়ান। আবার অনেকে কোম্পানির কৃত্রিম ফিডও খাইয়ে থাকেন। আগের তুলনায় গমের দাম কেজিতে ৯ টাকা, ডালের খোসায় ৭, চালের খুদে ৩ ও দানাদার ফিডে ৫ টাকা করে বেড়েছে। গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক খামারিরা দিশেহারা পড়েছে। তাই অনেকে তাদের খামার বন্ধ করে দিয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার একরামুল হক মন্ডল বলেন, মিঠাপুকুর উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫শত খামার রয়েছে। আমরা খামারিদের ঘাস চাষের পরামর্শ দিচ্ছি। গরুকে পর্যাপ্ত ঘাস ঘাস খাওয়াতে পারলে অন্যান্য খাবারের পরিমান কম লাগবে