পরিবারের অভাব ঘোচাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন নরসিংদীতে। কাজ করতেন একটি টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে। দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে শরীরে দেখা দেয় বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি। পরবর্তীতে ফিরে আসেন গ্রামে। শুরু করেন কৃষি কাজ। নিজের ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম , ধৈর্য ও সততা দিয়ে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার বালুরচর এলাকার সফল কৃষক মোঃ আবু সাদেক মিয়া। বর্তমানে তিনি কিনেছেন ফসলি জমি। এছাড়াও ফসল উৎপাদনের লাভের টাকা দিয়েই নির্মাণ করেছেন বাড়ি, করেছেন গরুর খামার। ছেলেমেয়েদের পাঠাচ্ছেন স্কুল-কলেজে।
জানা যায়, শুরুর দিকে স্থানীয় সফল কৃষকদের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মরত অফিসার, কৃষি কর্মকর্তা ও ডিলারদের কাছ থেকে নিয়েছেন কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ। আর এভাবেই নিজেকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি এলাকায় হয়ে উঠেছেন একজন আদর্শ কৃষক। এ প্রসঙ্গে মোঃ আবু সাদেক মিয়া জানান, শুরুর দিকে লোকসান করলেও ধীরে ধীরে ধান চাষের মাধ্যমে লাভবান হয়েছি। চলতি বছর সব ধরণের খরচ বাদ দিয়ে ৬০ হাজার টাকা লাভ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ধরনের সবজি সহ ধানের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পেতে হলে অবশ্যই ভাল বীজের পাশাপাশি ভাল কীটনাশক, সার ও ভিটামিনের দরকার হয়। তাই নতুন চাষিদের ভাল মান ও গুণ সম্পন্ন পণ্য ব্যবহারের আহবান জানান।
ধান চাষের মাধ্যমে আবু সাদেক মিয়ার এমন সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন স্থানীয় কালিয়ানি বাজারের পেস্টিসাইড ও কীটনাশকের ডিলার মোঃ আবুল হোসেন। তিনি বলেন, আগে আমরা এলাকার চাষিরা তেমন একটা লাভ করতে পারতাম না। পরবর্তীতে সাদেক মিয়ার দেখাদেখি আমরাও ধান চাষে উদ্বুদ্ধ হই। তার পরামর্শে এ বছর ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছি।
নিরাপদ সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি ধান চাষে উদ্বুদ্ধকরণে প্রান্তিক চাষিদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিস। প্রান্তিক পর্যায়ে চাষিদের কি ধরনের সহায়তা প্রদান করছেন জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, ধান চাষ সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব সময় চাষিদের সেবামূলক বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছি। চাষিদের কোন ধরনের সমস্যা হলে আমরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করি।
নেত্রকোণা জেলার নান্দাইল উপজেলার মাটি বেশ উর্বর। চলতি বছর উপজেলায় ব্যাপকভাবে ধানের পাশাপাশি চাষ হচ্ছে টমেটো, লাউ, শসা, মরিচ, করলা, ধুন্দল্ আলু, বেগুণ, ঢেড়স সহ নানা ধরনের সবজি । ধানের বাম্পার ফলন ও ভাল দাম থাকায় প্রতি বছর আবু সাদেক মিয়ার মত হাজারও কৃষক নিজেদেরকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলছেন । যার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, বদলে যাচ্ছে আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি।