রংপুরে চাষ হচ্ছে কফি ও কাজুবাদাম

ফজলুর রহমান, রংপুরঃ রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার গোয়াল বাড়ি এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান। তিনি পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিংয়ে চাকরি করতেন।

অনলাইনে কফি চাষের ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হন মোখলেছুর রহমান। অনেকটা শখের বসে কফি চাষ শুরু করেন। কক্সবাজারের জাহানারা গ্রিন অ্যাগ্রো থেকে উন্নত ফলনশীল এ্যারাবিয়ান জাতের চারা সংগ্রহ করেন। ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর বাড়ির পাশে রাস্তার ধারের ২০ শতক জমিতে ৪৫০টি চারা রোপণের মধ্য দিয়ে শুরু করেন কফি চাষ। এতে তার খরচ হয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা।

এরপর ১৮ মাস পর কফি গাছে ফুল আসে। পরে ২০২০ সালে বাগান থেকে ২৫ কেজি গ্রিন বিন সংগ্রহ করেন মোখলেছুর, যা বিক্রি করে ছয় হাজার টাকা আয় করেন। ২০২১ সালে এসে বাগান থেকে ৭০ কেজি গ্রিন বিন পৌনে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করেন। গত বছরে মোখলেছুর রহমান বাগান থেকে ১০৭ কেজি গ্রিন বিন তিন লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। বর্তমানে মোখলেছুর রহমান কফি বাগানের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে চারাও উৎপাদন করছেন।

এখন তার বাগানের পাশে গড়ে তুলেছেন রংপুর কফি ক্লাব। যেখানে বিকেল হলেই কফি আড্ডায় মেতে উঠেন সববয়সী মানুষ। অর্থকরী ফসল হিসেবে কফি চাষের মাধ্যমে রংপুরের পিছিয়ে পড়া অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে চান মোখলেছুর রহমান।

পীরগঞ্জের বড় আলমপুর ইউনিয়নের কৃষক মাঈনুল ইসলাম তার জমিতে কফির পাশাপাশি গড়েছেন কাজুবাদামের বাগান। সঙ্গে দুই বাগানে সাথি ফসল হিসেবে রেখেছেন কুলগাছও। কৃষক মাঈনুল ইসলাম বলেন, আমার ৫০ শতক করে দুটি উঁচু জমি আছে। এ জমিতে আগে আখ চাষ করতাম। বর্তমানে সেখানের একটিতে কফি এবং আরেক জমিতে কাজুবাদাম চাষ করছি। আশা করছি ভালো ফলন হবে।

পীরগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বড়আলমপুর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পে দারুণভাবে বেড়ে ওঠা কাজুবাদাম এবং অন্যান্য ফলের গাছগুলি প্রকল্পের চারপাশে এক মনোরম ও নয়নাভিরাম পরিবেশ তৈরি করেছে, যা এলাকাটিকে নজরকাড়া একরূপে সজ্জিত করার পাশাপাশি সুন্দর সবুজায়ন অঞ্চলে পরিণত করেছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের মাঝে উন্নতমানের চারা সরবরাহের কারণে কফি ও কাজুবাদাম চারা আশানুরূপভাবে বেড়ে উঠছে। পাশাপাশি কৃষকদের আমরা ওই বাগানগুলোকে সাথি ফসলের পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ কফি ও কাজুবাদাম গাছ একটু ছায়াযুক্ত স্থান বেশি পছন্দ করে।

তারাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উর্মি তাবাসসুম বলেন, মোখলেছুর রহমান ব্যক্তি উদ্যোগে কফি চাষ করছেন। আমরা তাকে আরও বড় পরিসরে চাষাবাদ বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছি। চেষ্টা করেছি তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করার। যখন যা প্রয়োজন কারিগরি সহযোগিতার, তা দেওয়া হচ্ছে। সরকারিভাবে রংপুর জেলার দুটি উপজেলায় কফি চাষ শুরু হয়েছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, রংপুরের বদরগঞ্জ ও পীরগঞ্জ উপজেলায় কফি ও কাজুবাদাম চাষে কৃষকদের চারা প্রদান,প্র্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সহায়তা দিয়েছি। সরকারি এ উদ্যোগ সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হলে কফি ও কাজুবাদাম চাষ করে এ অঞ্চলের কৃষকরা নিজেদের আর্থিক উন্নয়ন ঘটাতে পারবেন বলে আমরা আশা করছি।