মিয়াজাকি: বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম

মিয়াজাকি আম, যার এক কেজির দাম ৩ লাখ টাকা , কেন এত দাম জানেন ? কী আছে এই আমে ? মিয়াজাকি আম এতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ও ফোলিক অ্যাসিডের মতো উপকারী উপাদান। এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসারকে ফাঁকি দেয়ার কাজেও সাহায্য করে এই আম। এছাড়া মিয়াজাকি ম্যাঙ্গোতে রয়েছে জিঙ্ক, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, কপার এবং ম্যাগনেশিয়ামের ভাণ্ডার। মিয়াজাকি আম পৃথিবীর সব চেয়ে দামী আমের কেজি কত হতে পারে অনুমান করুন , প্রাত ৩ লাখ টাকা ! হ্যাঁ এমনই অবিশ্বাস্য দাম জাপানের মিয়াজাকি প্রজাতির আমের। “সূর্যের ডিম” নামে খ্যাত মিয়াজাকি আম তার অসাধারণ গুণমান ও চড়া দামের কারণে বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত । কিন্তু এই জাপানি ফল এত দামি কেন হয়, আর এর স্বাস্থ্য উপকারিতা কী ? মিয়াজাকি আম পৃথিবীর অন্যতম দামি ফল, যার জোড়া কয়েক হাজার ডলারে বিক্রি হয়। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।

অতি যত্নশীল চাষ পদ্ধতি:
জাপানের মিয়াজাকি প্রদেশে বন্ধুর পরিবেশে এই আম চাষ করা হয়। প্রতিটি আম যেন সমান পরিমাণ সূর্যালোক পায় তা নিশ্চিত করতে কৃষকরা জাল ব্যবহার করেন, ফলে আমের রং আরও গাঢ় ও মিষ্টি হয়। গাছে থাকা অবস্থায় প্রতিটি আমকে ফোমের জাল দিয়ে মুড়িয়ে রাখার এক অনন্য পদ্ধতিও তারা অবলম্বন করেন, যাতে আমের আকার ও গঠন নিখুঁত হয়।

সীমিত উৎপাদন:
মিয়াজাকি আমের উৎপাদন সীমিত। যত্নশীল চাষ পদ্ধতির কারণে একসাথে অনেক আম উৎপাদন করা সম্ভব হয় না, ফলে এটি একটি বিরল ফল।

গুণমান নিয়ন্ত্রণ:
প্রতিটি আম কঠোর গুণমান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ওজন, মিষ্টির পরিমাণ ও রঙের মানদণ্ড পূরণ করে এমন আমই মিয়াজাকি ব্র্যান্ডের অধীনে বিক্রি করা হয়। এই উচ্চমান নিশ্চিত করাতেই এর দাম এত বেড়ে যায়।
মিয়াজাকি আমের পুষ্টি ও উপকারীতা:
বিলাসবহুল ফল হিসেবে পরিচিতির পাশাপাশি মিয়াজাকি আমে রয়েছে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান যা স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ উপকারী ।

ভিটামিন ও খনিজ: মিয়াজাকি আম ভিটামিন এ, সি ও ই সমৃদ্ধ, এছাড়াও রয়েছে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি, ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আয়রন শোষণে সাহায্য করে। ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, কোষকে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: এই আমে বিটা-ক্যারোটিন ও জিয়াজ্যান্থিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা শরীরের জারণ প্রক্রিয়া প্রতিরোধ করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়। সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষা ও হৃদরোগ, ক্যান্সারের মতো অবস্থা প্রতিরোধে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়েটরি ফাইবার : উচ্চ পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার থাকায় মিয়াজাকি আম হজমে সাহায্য করে এবং সুস্থ অন্ত্র বজায় রাখতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ ও নিয়মিত মলত্যাগের জন্য ফাইবার অপরিহার্য।
প্রাকৃতিক শর্করা: মিষ্টি হলেও, মিয়াযাকি আমের শর্করা প্রাকৃতিক এবং এতে ফাইবারের উপস্থিতি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে এটি প্রক্রিয়াজাত মিষ্টি খাবারের চেয়ে ভালো বিকল্প।

কম ক্যালোরি: সুস্বাদু হলেও এই আমে তুলনামূলকভাবে কম ক্যালোরি থাকে। তাই যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তারা নিশ্চিন্তে এটি খেতে পারেন।
অর্থাৎ এক কথায় মিয়াজাকি আম খেলে, ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে, বশে থাকে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে , ত্বকে ফুটে ওঠে যৌবনের দীপ্তি, পেটের স্বাস্থ্য ফেরায়, শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মিয়াজাকি আম শুধু পুষ্টিকরই নয়, রন্ধনশৈলীরও একটি প্রিয় উপাদান। এর গাঢ় লাল রং এবং রসালো, মিষ্টি শাঁস এটিকে বিলাসবহুল খাবার এবং মিষ্টান্নের জনপ্রিয় পছন্দ করে তুলেছে। সারা বিশ্বের শেফরা সালাদ, স্মুদি থেকে শুরু করে জটিল মিষ্টান্ন পর্যন্ত বিভিন্ন খাবারে বিলাসিতার ছোঁয়া আনতে এটি ব্যবহার করেন। জাপানে মিয়াজাকি আম শুধু একটি ফল নয়, এটি যত্ন, নিষ্ঠা এবং পরিপূর্ণতার প্রতীক। বিশেষ অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়, এটি সৌহার্দ্য ও বিলাসিতার প্রতিনিধিত্ব করে। এই আম চাষ ও সংগ্রহের প্রক্রিয়া প্রতিটি কাজে অতি যত্নশীল মনোযোগ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জাপানি দর্শনের প্রতিফলন ঘটায়। অনেকের কাছে এর দাম অত্যধিক হলেও, এই ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং এর সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য এর প্রতিক। এটিকে যারা কিনতে পারেন, তাদের জন্য সংগ্রহযোগ্য সম্মানের প্রতিফলন করে তোলে।

লেখক: সমীরণ বিশ্বাস, কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ , ঢাকা।