বিএডিসি’র সেচ কার্যক্রম পরিদর্শন করলো আইইবি

আবুল বাশার মিরাজঃ অত্যাধিক খরচ ও সেচের অভাবে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জামসা ইউনিয়নের উত্তর জামসা মৌজার কয়েক কিলোমিটার এলাকার মানুষের কৃৃষিকাজ। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর বৃহত্তর ঢাকা জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে সেচ কার্যক্রম গ্রহণের কারণে নতুন করে চালু হয়েছে কৃষির আবাদ। যে জমিতে সেচের কারণে বছরে মাত্র একটি ফসল ফলাতে পারতো, সেই একই জমিতে বছরে এখন ৩টি ফসল আবাদ করছে স্থানীয় কৃষকেরা। এর ফলে উক্ত এলাকায় মোট কৃষিজ উৎপাদন বেড়েছে, কৃষিতে সাফল্যের মুখ দেখেছে অনেক কৃষক।

এবার কৃষকদের সেই সাফল্যের খবর জানতে ও অত্যাধুনিক সেচ প্রযুক্তির খবর জানাতে টেকনিক্যাল ট্যুর ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি), বিএডিসি ও স্থানীয় জনসাধারণ। শনিবার, (২ মার্চ, ২০২৪) আইইবি’র কৃষিকৌশল বিভাগ এ মাঠ সফরের আয়োজন করে। এসময় তারা উত্তর জামসা ৫-কিউসেক এলএলপি সেচ স্কীম পরিদর্শন ও কৃষকদের সাথে মতবিনিময় করেন।

সুবিধাভোগী কৃষকেরা জানিয়েছেন, ‘ডিজেলের দাম অনেক বেড়েছে। এজন্য কৃষিকাজ অনেকটা বন্ধই করে দিয়েছিলাম। তবে বিএডিসি’র সেচ প্রকল্পের কারণে আমরা কৃষিকাজে প্রাণ ফিরে পেয়েছি। এখন কম খরচেই চাষাবাদ করতে পারছি। সরকারের এই সেচ সুবিধার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

আইইবি’র কৃষিকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মিছবাহুজ্জামান চন্দন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিএডিসি’র বৃহত্তর ঢাকা জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও আইইবি কৃষিকৌশল বিভাগের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওয়াহিদুল ইসলাম।

স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘মানিকগঞ্জের জামসা ইউনিয়নের উত্তর জামসা মৌজায় কৃষকরা ইতোপূর্বে ২৭টি ডিজেল চালিত অগভীর নলকূপ (শ্যালো টিউবওয়েলে) ৩/৪ শত বিঘা জমিতে সেচ কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছিল। উপরন্তু এ এলাকার প্রায় ২০০০ বিঘা কৃষি জমির অধিকাংশ অনাবাদি থাকতো। আমরা বিএডিসি’র প্রকল্পের মাধ্যমে এ উত্তর জামসায় কালিগঙ্গা নদীতে ২টি ৫-কিউসেক লো লিফট পাম্প স্থাপন, বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ এবং দুই ধাপে প্রায় ৩৪০০ মিটার ভূগর্ভস্থ সেচ নালা ও পাম্প হাউস নির্মাণ করি। ফলে এলাকায় বর্তমানে ২০০০ বিঘা জমিতে স্বল্পমূল্যে সেচ সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে৷ আমাদের এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকের প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত সেচ খরচ কমিয়ে ফেলতে ভূমিকা রাখতে পারছি। এ কারণে এ এলাকার কৃষি লাভজনক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়ছে। পাশাপাশি ডিজেল চালিত পাম্প বন্ধ হওয়ায় পরিবেশও মারাত্মক দূষণ থেকে রক্ষা পেয়েছে।’

প্রকৌশলী মো. মিছবাহুজ্জামান চন্দন- তার বক্তব্যে বলেন, ‘এই সেচ প্রকল্পে (বিএডিসি) বারিড পাইপের মাধ্যমে সেচ দেওযার কারণে মাটির ক্ষয় রোধ হচ্ছে, পানির কোন অপচয়ও হচ্ছে না। এতে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে পানি পৌঁছে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কৃষিবান্ধব সরকারের উদ্যেগের কারণে দেশের কৃষি ও কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। একই সাথে প্রচলিত কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আইইবি’র ভাইস-প্রেসিডেন্ট (সার্ভিসেস এন্ড ওয়েলফেয়ার) প্রকৌশলী মো. শাহাদাৎ হোসেন (শিবলু) পিইঞ্জ। এসময় তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘কৃষিবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের কারণে প্রান্তিক অঞ্চলের কৃষকরা এই সুন্দর পদ্ধতির মাধ্যমে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই, তাঁর সুদূর প্রসারী উদ্যোগগুলোর কারণেই কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্তা অর্জন করেছে।

তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের ঘোষণা দিয়েছেন, এইসব উন্নত প্রকল্পের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেচ প্রকল্পের এইসব প্রযুক্তি সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এরই মধ্যে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, সেজন্য কৃষি প্রকৌশলীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আইইবি’র কৃষিকৌশল বিভাগের সাবেক চেয়্যারমান ও বিএডিসি’র সাবেক প্রধান প্রকৌশলী বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম মিয়া, বিএডিসি’র সাবেক সদস্য পরিচালক (ক্ষুদ্র সেচ) ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী বীরমুক্তিযোদ্ধা আকতার হোসেন খান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. লুৎফর রহমান এবং আইইবি’র কাউন্সিল সদস্য ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিএডিসি, ডিএই, এমইএইচ, কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ও এনসিটিবি’র প্রকৌশলীগণ, গণ্যমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শতাধিক সুবিধাভোগী কৃষক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিএডিসি কুমিল্লা সার্কেলের তত্ত্বাধায়ক প্রকৌশলী ও আইইবি’র কৃষিকৌশল বিভাগের ভাইস-চেয়্যারমান প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।