বন্যার হুমকি: প্রস্তুতি নিন এখনই

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। বর্তমানে আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং রংপুর জেলার নদী সংলগ্ন নিম্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সতর্কবার্তা শুধু সরকারি দায়িত্ব নয়, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রস্তুতিরও গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশ করে। বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও সচেতনতা ও পূর্ব প্রস্তুতির মাধ্যমে এর ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষ করে নদী সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য এখনই সময় উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের। বন্যার সতর্কবার্তা ও পূর্ব প্রস্তুতি: প্রাণ ও সম্পদ রক্ষায় সচেতনতার এখনই সময়।

উঁচু স্থানে আশ্রয়ের পরিকল্পনা:

বন্যার সময় নিম্নাঞ্চল দ্রুত পানিতে ডুবে যেতে পারে। তাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে নিরাপদ এবং উঁচু স্থান নির্ধারণ করা জরুরি। স্থানীয় স্কুল, মাদ্রাসা কিংবা আশ্রয়কেন্দ্র সম্পর্কে আগেই জেনে রাখা উচিত। কোন পথে গেলে সহজে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছানো যাবে, তা পরিকল্পনা করে রাখা দরকার।

জরুরি ব্যাগ প্রস্তুত রাখা:

যেকোনো সময় ঘর ছাড়তে হতে পারে, তাই একটি জরুরি ব্যাগ আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। এই ব্যাগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র, জমির কাগজ, জন্মনিবন্ধন), শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ, টর্চলাইট, মোবাইল চার্জার ও কিছু নগদ টাকা রাখা উচিত। নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসামগ্রী এবং শিশুদের খাবার ও ডায়াপার রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।

বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা:

বন্যার পানিতে বিদ্যুৎ বা গ্যাস সংযোগ চালু থাকলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তাই ঘর ছাড়ার আগে সংযোগগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এ বিষয়ে পরিবারের সকল সদস্যকে আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।

স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা:

বন্যা মোকাবেলায় সরকারি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও নির্দেশনা মেনে চললে নিরাপদ থাকা সহজ হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, থানা বা উপজেলা প্রশাসনের হটলাইন নম্বর সংরক্ষণ করে রাখা দরকার। কোথায় আশ্রয়কেন্দ্র আছে, কীভাবে সেখানে পৌঁছাতে হবে—এসব তথ্য আগে থেকেই জেনে নেওয়া উচিত।

বন্যার হুমকিতে কৃষিতে করণীয় ,:

ফসল সংক্রান্ত করণীয়: ফসল দ্রুত কাটার ব্যবস্থা, নতুন রোপণ বন্ধ রাখা, উচ্চ জমিতে আবাদ করা, তরকারির চাষ কন্টেইনারে বা উঁচু বেডে।  বীজ ও চারা সংরক্ষণ: বীজ সংরক্ষণ, চারা নার্সারি স্থানান্তর, কৃষি যন্ত্রপাতি ও উপকরণ উঁচু ও নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করুন।
সার ও কীটনাশক সংরক্ষণ: এগুলো পানির নাগালের বাইরে, ভালোভাবে প্যাকেটজাত করে সংরক্ষণ করুন। গবাদিপশুর ব্যবস্থাপনা: উঁচু স্থানে আশ্রয় ,পশুদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করুন। খাদ্য সংরক্ষণ: শুকনো খড় ও পশুখাদ্য নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করুন।

সচেতনতা ও যোগাযোগ: আবহাওয়া বার্তা পর্যবেক্ষণ: স্থানীয় আবহাওয়া অফিস, রেডিও বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সর্বশেষ তথ্য রাখুন। স্থানীয় কৃষি অফিসে যোগাযোগ: পরামর্শ ও সাহায্যের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখন আসবে তা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, কিন্তু সচেতনতা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে এর ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। বন্যা সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সকলের নাগরিক দায়িত্ব। নিজেদের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সহায়তা করাও মানবিক কর্তব্য। মনে রাখতে হবে , প্রস্তুতি বাঁচাতে পারে জীবন ও সম্পদ। এখনই সময় সক্রিয় হওয়ার।

লেখক: সমীরণ বিশ্বাস, কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ , ঢাকা।