বছর ঘুরে আবার এলো ত্যাগ ও কোরবানীর মহিমায় উদ্ভাসিত পবিত্র ঈদুল আজহা। সকালে ঈদ জামাত এবং পশু কোরবানীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা।
মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ অনুযায়ী পশু কোরবানি করছেন।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য এবং তারই রাহে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে পালিত হয়ে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে কোরবানির বিধান চালু হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে হযরত ইবরাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইলকে (আ.)-কে কোরবানি করার নির্দেশ পালনের ঘটনার স্মরণে কোরবানি প্রচলিত হয়। প্রিয় পুত্র কোরবানির পরীক্ষায় হযরত ইবরাহিম (আ.) উত্তীর্ণ হয়েছিলেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে খলিলুল্লাহ উপাধি পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন প্রতি বছরই পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহপাকের আনুগত্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তার উম্মতের জন্য এ আদর্শ ও প্রথা অনুসরণের কঠোর নির্দেশ দিয়ে গেছেন। যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব তাদের জন্য কোরবানি করা বাধ্যতামূলক। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যাদের ওপর ওয়াজিব তারা কোরবানি না করলে যেন ঈদগাহে গমন না করে। তিনি আরও বলেছেন, কোরবানির দিন কোন ব্যক্তির কোরবানির পশুর রক্ত ঝরানোর মতো আল্লাহপাকের কাছে অধিক প্রিয় ও পছন্দনীয় কাজ আর কিছু নেই।
কোরবানিকে আল্লাহ এবাদত হিসেবে নির্দেশ করেছেন। পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশের প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য প্রদর্শন করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করাটাই উদ্দেশ্য। আল্লাহপাক সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না তাদের (পশুর) গোশত ও রক্ত বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।’
ত্যাগের এ উৎসবে ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য যেমন রয়েছে, তেমনি পারিবারিক, সামাজিক ও মানবিক নানা কল্যাণকর দিকও রয়েছে। সৌভ্রাতৃত্ব, ঐক্য সংহতি, বন্ধুত্ব, সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা সহানুভূতি প্রকাশের এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয় এই ঈদ। এই কোরবানির একটি অংশ দরিদ্রদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। ধনী দরিদ্র সকলেই যাতে সমভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে, সেজন্য ইসলামে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।