ঠাকুরগাঁওয়ে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালনে ঝুঁকছেন তরুণরা

মোঃ সবুজ ইসলাম, ঠাকুরগাঁওঃ একসময় গ্রামাঞ্চলে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনই ছিল কৃষকের বাড়তি আয়ের উৎস। কিন্তু এখন সেই বাড়তি আয়ের উৎস পরিনত হয়েছে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের জীবিকা নির্বাহের উৎসে।

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে পেশা হিসেবে খামারের দিকে ঝুঁকছেন শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম। চাকরির পেছনে না ছুটে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই স্বাবলম্বী হয়েছেন শতাধিক যুবক।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাণীশংকৈল উপজেলায় নিবন্ধিত -অনিবন্ধিত গরু,ভেড়া,হাঁস,মুরগির খামার রয়েছে ৮৩৪ টি। যার শ্রমিক আর মালিকই বেশির ভাগই শিক্ষিত যুবক।

বেকার যুবকদের জীবন বদলে দিতে কাজ করছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রশিক্ষণের পরে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া, যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করে যুবক্লাব গঠন, ক্লাবের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণসহ সার্বিকভাবে যুবকদের মাধ্যমে স্বনির্ভর দেশ গড়াই এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে খামার গড়ে তুলেছেন অনামিকা নামের এক অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রশিক্ষণ শেষে অধিদপ্তর থেকে ঋণ নিয়ে সম্প্রসারণ সহ গড়ে তুলেছেন গরুর খামার।

উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে শ্রেষ্ঠ জয়িতা’র সম্মানে ভূষিত হওয়া নারী করনাইট-কুমারগঞ্জ এর ঘনশ্যামপুর গ্রামের অনামিকা বলেন, আমাদের খামারে বিদেশি জাতের উন্নত গাভী রয়েছে। আমাদের খামার ২ টি গরু দিয়ে শুরু হলেও এখন গরুর সংখ্যা ১৪টি। এসব গরুর দেখভাল করি আমাদের পরিবারের সদস্যরা।তবে খুব ভালো লাগছে আমার খামার দেখে এখন অনেকেই খামারের দিকে ঝুঁকছে।

রাণী ভবানীপুর গ্রামের সাইদ হোসেন নামের একজন সফল উদ্যেক্তার খামারে গিয়ে কথা বলে জানা যায়, যুব উন্নয়ন এবং প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গড়ে তুলেছেন খামার। শুধু গরুর খামার নয় আছে দেশি মুরগী এবং ৫ টি পুকুর। খামারের পাশাপাশি এক কোম্পানিতে পার্ট-টাইম চাকরিও করছেন তিনি।

তিনি জানান, তার খামারে ১৬টি গরু রয়েছে। শুধু গরুর খামার নয়, মৌসুম অনুযায়ী ১০০০ এর অধিক হাঁস পালন করে থাকেন। নিজের চেষ্টা আর প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সঠিক চিকিৎসা এবং পরামর্শে খামারকে আরও প্রসারিত করতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

শুধু অনামিকা, সাইদ নয়, এর মতো শতাধিক শিক্ষিত খামারী আছেন খামারের সাথে যুক্ত।

পৌর শহরের বাসিন্দা উম্মে সাহেরা জানান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ এবং ঋণ নিয়ে পরিবারের সহযোগিতায় আমি আমার খামার গড়ে তুলি। রোগ বালাইয়ের বিষয়ে বলেন,পশু হসপিটালের চিকিৎসকদের পরামর্শ এবং চিকিৎসা নিয়মিত নিয়ে থাকি।

উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, যুবকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে আমরা স্বল্প মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। যুবদের উন্নয়নের জন্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

রাণীশংকৈল উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সাইদুর রহমান বলেন, রাণীশংকৈল উপজেলায় দিন দিন খামারীর সংখ্যা বাড়ছে। আমরা নতুন খামারিদের টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। খামারিদের প্রয়োজনে আমাদের দপ্তর সর্বদাই প্রস্তুত থাকে।