মোঃ সবুজ ইসলাম, ঠাকুরগাঁওঃ বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে সবুজের সমারোহ। আর এই ফসলের জমিতে ফলেছে শীতের নানা রকমের সবজি। তবে এর মধ্যে সবার নজর কেড়েছে বেগুনি রঙের বাঁধাকপি।স্থানীয়দের পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন ভিন্ন রঙের এ বাঁধাকপি দেখতে ও কিনতে।
উচ্চ ফলনের পাশাপাশি বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় ‘লালিমা’ নামে নতুন জাতের এ বাঁধাকপি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে। ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে চিরাচরিত সবুজ ছাড়িয়ে এবার চাষ হচ্ছে বেগুনি রঙের বাঁধাকপি। যা কৃষকদের দেখাচ্ছে রঙিন দিনের স্বপ্ন. উপজেলার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে বেগুনি রঙের এ বাঁধাকপির ক্ষেতের দেখা মেলে। সবুজের চেয়ে অল্প পরিচর্যা আর কম রোগ বালাইয়ের পাশাপাশি অল্প সেচে চাষ করা যায় এই কপি।
প্রথমবারের মতো রাণীশংকৈল উপজেলায় এক একর জমিতে চাষিরা চাষ করেছেন এই রঙিন বাঁধাকপি। রাউতনগর এলাকার চাষী সেলিম রেজা জানান, সবুজ জাতের বাঁধাকপির চেয়ে এই কপি চাষে তুলনামূলক কম পরিচর্যা করতে হয়। অন্যদিকে রোগবালাই তেমন নেই বললেই চলে। অনেক সুবিধাও রয়েছে। অন্যান্য ফসলে যেমন প্রতিদিন পরিশ্রম করতে হয়, এই কপি চাষে তার প্রয়োজন হয় না। ফলে এটি চাষ অনেক সহজ।
তিনি আরও জানান, নতুন জাত হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে চাহিদা ভালো।এই কপি বাজারে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়। দামও পাওয়া যায় ভালো।
আলমগীর নামের এক চাষী বলেন, সবুজ বাঁধাকপির তুলনায় এই কপি খেতেও স্বাদ বেশি। দেখতেও অনেক সুন্দর। তাই জমি থেকেই কপি বিক্রি হয়ে যায়। আমরা প্রথম চাষ করেছি, দামও বেশ ভালো পেয়েছি। ইচ্ছে আছে আগামীতে আরও বেশি কপি চাষ করার।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. একরামুল করিম বলেন, সব ধরনের রঙিন শাক সবজিতে সবুজগুলোর তুলনায় ভিটামিন বেশি থাকে। ফলে এখন সবুজ শাকসবজির পাশাপাশি এই ধরনের রঙিন সবজি চাষ বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গবেষণায় দেখা গেছে এই কপি ভিটামিন ‘সি’ ও ‘কে’ সমৃদ্ধ। এই কপিতে চর্বি নেই বললেই চলে। পাশাপাশি এই কপি ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী। ফলে এটি খাওয়া মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী।
তিনি আরও জানান, এই কপি চাষে আমরা কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে করে এই কপি চাষ বৃদ্ধি পায়।
রাউতনগর এলাকার কৃষক আইনুল হক জানান, তার জমিতে ভিন্ন কিছু চাষ করার ভাবনা থেকে লাল বাঁধাকপি চাষ করেছেন। রঙিন লাল বাঁধাকপি দেখতে সুন্দর। ভিতরে টুকটুকে লাল ও স্বাদে কিছুটা মিষ্টি হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি। এরই মধ্যে বাজারে বিক্রি শুরু করা হয়েছে। এই লাল বাঁধাকপি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন। ৮০-৯০ দিনে কপিগুলো পরিপক্ব হয়ে বিক্রির উপযোগী হয়। অল্প টাকা খরচ করে আমি বেশ লাভ পেয়েছি। আগামীতে আরও বেশি জমিতে এ জাতের কপি’র চাষ করব।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, দিনাজপুর অঞ্চলের টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে উপজেলায় প্রথমবারের মতো রঙিন বাঁধাকপির চাষ হয়েছে। প্রথমবার চাষ করেই সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা।
তিনি আরও জানান, প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন সি, ই, কে, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যারোটেনেয়ড সমৃদ্ধ সবজি হচ্ছে বাঁধাকপি। এই সবজি ক্যান্সার ও আলসার প্রতিরোধে কাজ করে।