জলবায়ু পরিবর্তন: বিশ্ব মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে ঢাকাসহ ছয় স্থান

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে বাংলার রাজধানী ঢাকার নাম । জি হ্যাঁ , ঠিকই শুনছেন, আসছে দিনগুলিতে বিপর্যয় মুখে পড়ে, পুরোপুরি বিলীন হতে পারে ঢাকা নামে জেলাটির অস্তিত্ব, শুধু তাই নয় ঢাকার পাশাপাশি আরো পাঁচটি বড় বড় শহরও পড়তে চলেছে অস্তিত্ব সংকটে। ঠিক এমনই দাবি করেছে ন্যাশনাল ওসেনিক এন্ড এটমসফিয়ারিং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। তাদের মতে সারাবিশ্বে এমন স্থান রয়েছে, যে গুলির নাম আগামী দিনে চিরতরে বিশ্বের মানচিত্র থেকে, সম্পূর্ণরূপে মুছে যেতে পারে। এমনকি সমুদ্রের পানিতে বিলীন হয়েছে যেতে পারে সেখানকার জনসংখ্যা।

এ তালিকায় রয়েছে, বিশ্বের ছয়টি স্থানের নাম, যেখানে স্থান পেয়েছে আমাদের ঢাকা রাজধানীর নামও। ন্যাশনাল ওসেনিক এন্ড এটমসফিয়ারিং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে , বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এখানের হার ছিল ১.৪ মিলিমিটার, সেখানে ২০১৫ সাল নাগাদ এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৬ মিলিমিটারে।

উষ্ণায়নের কারণে গোটা বিশ্ব জুড়ে দেখা দিয়েছে নানাবিধ বিস্ময়কর সংকট। যেমন কোথাও কোথাও গ্রীষ্মকালে তুষারপাত দেখা দিয়েছে। আবার কিছু জায়গায় শীতকালে হচ্ছে প্রবল বৃষ্টিপাত। বিশ্বের একাংশের তাপমাত্রা এতটাই বেড়ে চলেছে যে, তা জন-মানুষের সহ্য ক্ষমতাকে অতিক্রম করে ফেলেছে। আর এই সিমটম গুলির প্রায় প্রতিটি দেখা যাচ্ছে আমাদের বাংলাদেশেও। এখানে শীতকালে দেখা যাচ্ছে প্রবল বৃষ্টিপাত। গ্রীষ্মকালে দেখা মিলছে কাঠফাটা গরমের। শীতকাল দেরিতে আসছে এবং তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে। মোটকথা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা দিচ্ছে আমাদের দেশ সহ বিশ্বজুড়ে।

বিশ্বের এমন কিছু স্থান রয়েছে যেগুলি পানিতে ডুবে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। এরকম পরিবর্তন চলতে থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের এই শহরগুলো পানির নিচে ডুবে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। সেই ছয়টি অঞ্চল হচ্ছে, মালে মালদ্বীপ, পৃথিবীর এসব স্থান ডুবে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে, তার মধ্যে মালদ্বীপের রাজধানী মালের নাম রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে দেশটির ৭৭ শতাংশই পানিতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। গিরিবাদী ওশেনিয়া সংক্ষিপ্ত এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। বর্তমানে এই দেশের জনসংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার, ভবিষ্যতে দেশটি তার দুই তৃতীয়াংশ ভূমি হারাতে পারে, ফলে দেশটি তার অস্তিত্ব রক্ষায় হুমকির সম্মুখীন হতে পারে ৮০ হাজার মানুষ।

চীন-এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী দেশ, চীনও রয়েছে এই সংকটের মধ্যে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে চিনিও। চীনের প্রায় ৪৩ মিলিয়ন মানুষ সমুদ্রের কাছাকাছি বসবাস করছেন। তারা হুমকির মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঢাকা-বাংলাদেশ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাও ডুবে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে প্রায় আগামী ৩২ কোটি মানুষের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি নষ্ট হতে পারে। ভারত – তালিকায় পরবর্তী নামটি আমাদেরই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত লাইভ এডাপটিভ প্রকল্পের গবেষণা অনুযায়ী আগামী সময়ে দেশটির সাতাশ কোটি মানুষের জমি সমুদ্রে ডুবে যেতে পারে। ব্যাংকক- থাইল্যান্ড, ওয়াল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী সময়ে থাইল্যান্ড পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে।

পরিবেশ রক্ষায় এখনি যদি, যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, তবে এই সকল দেশগুলিকে হয়তোবা হুমকির মুখ থেকে বাঁচানো সম্ভবপর হবে না।


লেখক: সমীরণ বিশ্বাস
কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ , ঢাকা।