চীনের কৃষি যন্ত্রপাতি মেলা সরেজমিনে ঘুরে এসে দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে এই মেলার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রভাব ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন ইয়ন গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইয়ন মটরস লিঃ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান। পাঠকদের জন্য বিস্তারিত তুলে ধরা হল………………….
চীনের কৃষি যন্ত্রপাতি মেলা (China International Agricultural Machinery Exhibition) বিশ্বব্যাপী কৃষি প্রযুক্তি ও যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে স্বীকৃত। প্রতি বছর চীনের বিভিন্ন শহরে (যেমন: ছিংদাও, উহান) আয়োজিত এই মেলাটি কৃষি যন্ত্রপাতির সর্বশেষ উদ্ভাবন, স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি এবং টেকসই সমাধান প্রদর্শনের মাধ্যমে বিশ্বের কৃষি বিশেষজ্ঞ, উৎপাদক ও নীতিনির্ধারকদের একত্রিত করে। ২০২৩ সালে এই মেলায় ২,০০০ এরও বেশি প্রদর্শক অংশগ্রহণ করে এবং ১ লক্ষের অধিক দর্শক প্রযুক্তির নতুন প্রবণতা সম্পর্কে জানতে সমবেত হন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরাও এই মেলায় কৃষি যন্ত্রপাতির আধুনিকায়নে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের (২০২৫) নভেম্বরে আবারও এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবারও এই মেলায় প্রযুক্তির সর্বশেষ সংস্করণের সন্নিবেশ ঘটবে।
মেলার উল্লেখযোগ্য দিক
চীনের এই মেলায় ট্র্যাক্টর, হার্ভেস্টার, সেচ প্রযুক্তি, ড্রোন টেকনোলজি, শস্য প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র থেকে শুরু করে স্মার্ট ফার্মিং সলিউশন পর্যন্ত নানা ধরনের যন্ত্রপাতি প্রদর্শিত হয়। বিশেষ করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) ভিত্তিক প্রযুক্তিগুলো কৃষি শ্রমের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, চীনা কোম্পানি লোভল (Lovol) এবং ইয়ুটিও গ্রুপ (YTO Group) এর রোবোটিক হার্ভেস্টিং সিস্টেম এবং স্বয়ংক্রিয় সেচ ড্রোনগুলো বিশ্বজুড়ে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিকতা
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, যেখানে জনসংখ্যার প্রায় ৪০% প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। তবে প্রচলিত চাষাবাদ পদ্ধতি, যান্ত্রিকীকরণের অভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। চীনের এই মেলা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুযোগ তৈরি করে:
১. সাশ্রয়ী মূল্যের যন্ত্রপাতি: চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের বাজারে উপযোগী কম খরচে উচ্চ効率的 যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে পারে।
২. জ্ঞান বিনিময়: চীনের কৃষি বিশেষজ্ঞদের সাথে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষিবিদরা আধুনিক কৌশল রপ্ত করতে পারেন।
৩. টেকসই সমাধান: জলবায়ু সহনশীল ফসলের চাষ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য চীনের প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য।
সহযোগিতার সম্ভাবনা
চীনের সাথে বাংলাদেশের কৃষিখাতের সম্পর্ক ইতিমধ্যে গতিশীল। বাংলাদেশে চীনা ট্র্যাক্টর ও কম্বাইন হার্ভেস্টারের ব্যবহার বাড়ছে। এই মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশী কোম্পানিগুলো চীনের প্রযুক্তি উৎপাদনকারীদের সাথে যৌথ উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারে, যা স্থানীয়ভাবে যন্ত্রপাতি উৎপাদন ও রপ্তানিকে ত্বরান্বিত করবে। এছাড়া, চীনের “বেল্ট অ্যান্ড রোড” উদ্যোগের অধীনে কৃষি অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগের সুযোগও রয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
যদিও চীনা প্রযুক্তি বাংলাদেশের কৃষিখাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। যেমন: স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণের অভাব, যন্ত্রপাতির উচ্চ প্রাথমিক খরচ এবং মেরামত সুবিধার সীমিততা। এ সমস্যা সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যৌথ প্রকল্প গ্রহণ, কৃষকদের জন্য সাবসিডি এবং টেকনিক্যাল এডভাইজরি সেন্টার স্থাপন জরুরি।
উপসংহার
চীন কৃষি যন্ত্রপাতি মেলা কেবল একটি প্রদর্শনীই নয়, এটি বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি মিলনস্থল। বাংলাদেশের জন্য এই মেলা কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গতি বাড়ানো এবং টেকসই কৃষিচর্চার দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ। সরকার, কৃষিবিদ এবং বিনিয়োগকারীদের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে চীনের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের কৃষি বিপ্লব সম্ভব!