মানিকগঞ্জে চাষ হচ্ছে বারি সরিষা-১৮, বিঘাপ্রতি উৎপাদন ৮ মণ!

সরিষা একটি তেল জাতীয় ফসল। বর্তমান পরিস্থিতে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ সয়াবিন ছেড়ে সরিষার তেলের দিকে ঝুঁকছে। যারফলে বিগত বছরগুলোর তুলনায় বর্তমানে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে সরিষা। প্রচলিত সরিষার জাত ছাড়াও নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল সরিষার জাত উদ্ভাবনে গবেষণা চালাচ্ছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। এরই ধারাবাহিকতায় অধিক উৎপাদনশীল সরিষার জাত বারি সরিষা ১৮ এর চাষ সম্প্রসারনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মানিকগঞ্জ সিংগাইর উপজেলা কৃষি অফিস।

সিংগাইর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর মাঠ প্রদর্শনীর মাধ্যমে ৬৬ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে বারি সরিষা ১৮। নতুন এই জাতের সরিষা চাষ সম্প্রসারণে চাষিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। ভোজ্য তেল আমদানিতে বাংলাদেশকে প্রতিবছর ২ হাজার ১শ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়। সরিষার এমন উচ্চ ফলনশীল জাতগুলো আবাদের মাধ্যমে দেশে ভোজ্যতেলের সংকট অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব বলেও জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

কি উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠ পর্যায়ে এই নতুন জাতের সম্প্রসারন করা হচ্ছে জানতে চাইলে সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুলতান সপন বলেন, বারি সরিষা-১৮ একটি উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা। এর তেল উচ্চ পুষ্টি সমৃদ্ধ ও ক্যানোলা মানের। এই জাতের সরিষার বিঘাপ্রতি ফলন এবং অন্যান্য জাতের তুলনায় বেশি।

তিনি আরও বলেন, প্রচলিত অন্যান্য জাতের তুলনায় এটির জীবনকাল একটু বেশি হলেও ফলন অধিক। এছাড়াও রোগের প্রাদুর্ভাব খুবই কম। প্রচলিত অন্যান্য জাতের সরিষার বিঘাপ্রতি উৎপাদন ৪-৫ মণ হলেও এর উৎপাদন হয় ৮-৯ মণ। এছাড়াও এই সরিষার স্টিক অনেক বড়। ফলে জ্বালানি হিসেবেও অধিক পাওয়া যায়। সেজন্য এই জাতের সরিষা চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। নতুন এই জাতের চাষ সম্প্রসারণে চাষিদের উদ্বুকরণে কৃষি অফিস প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।

নতুন এই জাত সম্পর্কে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র সরকার জানান, একটি উচ্চ ফলনশীল ও ক্যানোলা মানের সরিষার জাত বারি সরিষা ১৮। অধিক পুষ্টি ও দ্বিগুণ উৎপাদনশীল এই সরিষার চাষের মাধ্যমে ভোজ্য তেলের আমদানি কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কেননা এই জাতের সরিষা চাষে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এছাড়াও এর উৎপাদন দ্বিগুণ। বিঘাপ্রতি অন্যান্য জাতের সরিষার বীজ যেখানে লাগে ১ কেজি সেখানে এই জাতের বীজ লাগে মাত্র ৭০০-৭৫০ গ্রাম।

আরও পড়ুনঃ ঠাকুরগাঁওয়ের সবজি যাবে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে

নতুন এই জাতের সরিষা চাষে ফলন কেমন জানতে চাইলে কমলনগরের সরিষা চাষি নৃপেন চন্দ্র রায় জানান, অন্যান্য জাতের সরিষার বেশকিছু পোকার উপদ্রব হত কিন্তু এই জাতের সরিষারএখন পর্যন্ত কোন পোকার আক্রমণ হয়নি। এছাড়াও এই জাতের গাছের আকার অনেক বড়। পাশাপাশি ব্রাঞ্চিং অনেক। এতে করে বাম্পার ফলনই হবে বলে আশা করছি। অন্যান্য জাতের সরিষা বিঘাপ্রতি উতপাদন হত ৪-৫ মণ কিন্তু এই জাতের সরিষার ফলন প্রায় ৮ মণ হবে বলে কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

চর উলাইল গ্রামের আরেক নারী চাষি নার্গিস বলেন, এর আগে বারি ১৪ চাষ করতাম। এবারই প্রথম এই জাতের সরিষা চাষ করেছি। গাছের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ভালুই ফলন পাওয়া যাবে। প্রত্যাশামত ফলন পেলে আগামী বছর এর চাষ সম্প্রসারণ করব।