নীলফামারীর সদরের পলাশবাড়ী এলাকার নলনী কান্ত রায়। একসময় ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হতো, তাতে কোনোমতে সংসার চলতো তার। তবে টানাপোড়েনের সংসারে কলা চাষ করে বদলে গেছে নলনীর জীবন। এখন আর আগের মতো সংসারে অভাব নেই বললেই চলে। তার দেখাদেখি এলাকার এখন অনেক চাষিই কলা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নলনী। নলনীর ভাষ্যমতে কলা চাষের মাধ্যমে অন্যান্য চাষিরাও সাফল্য পেতে পারে। এলাকায় পাইকাররা এসে কলা কিনে নিয়ে যায় এছাড়াও অনেক সময় কলা স্থানীয় বাজারে নিয়েও বিক্রি করা যায় বলে জানান চাষিরা। সাগর কলা, সবরি কলা, মনুয়া কলা, আটিয়া কলা, কাচাকলা, চম্পা কলা ছাড়াও বিভিন্ন জাতের কলার চাষ হচ্ছে।
জানা গেছে, নীলফামারীর ৬ উপজেলায় কলা চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করছেন তারা। এতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক চাষি। কৃষকেরা জমিতে বেশি লাভের আশায় কলার জমিতে চাষ করছেন সাথী ফসল। দেশের অন্য অঞ্চলের মতো নীলফামার বিভিন্ন এলাকায় জনপ্রিয় হচ্ছে মিশ্র পদ্ধতিতে সাথী ফসল।
চাষিরা বলছেন, এক মৌসুমে একই সময়ে জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। জেলার অনেক কৃষক কলার জমিতে আলু, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, মাসকালাই প্রভৃতি চাষ করছেন।
চাষি নলনী কান্ত রায় বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে কলা গাছ লাগিয়েছি। কলা ক্ষেতের মধ্যে আলু লাগিয়েছি। আলু উঠলে মসুরি ডাল লাগাবো। প্রাকৃতিক কোনো কারণে ক্ষেত নষ্ট না হলে প্রতি বিঘায় লক্ষাধিক টাকার কলা বিক্রি করা যাবে। এরই মধ্যে আলু বিক্রি করার উপযোগী হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর ধরে এই কলা চাষ করে আমার সংসারের অভাব দূর হয়েছে।’
একই গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, ‘কলা চাষে লাভের পাল্লাই ভারি থাকে। প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫০ থেকে ৪০০ কলা গাছ লাগানো যায়। গাছ লাগানো থেকে শুরু করে ১১ মাসের মধ্যে কলা কাটা যায়। এর মধ্যে কলা পাওয়া যায় ৩০০-৩২০টি গাছে। নানা কারণে বাকি গাছ জমিতে টিকে থাকে না। বর্তমানে এক পির কলা উৎপাদন করতে ৮০-১০০ টাকা খরচ হয়।
আরও পড়ূনঃ রোপণের ৬ মাসের মধ্যেই আসবে কলার ফলন
লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের বেলতলী এলাকার চাষি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে সবজির দাম কিছুটা কম হলেও আলু বিক্রি শেষে ওই ক্ষেতেই মিষ্টিকুমড়া অথবা শাক জাতীয় ফসল চাষ করে প্রতি বিঘায় ১০-১২ হাজার টাকা পাওয়া যেতে পারে। চুক্তিভিত্তিক নেওয়া জমিতে কম সময়ে, কম জমিতে এক মৌসুমে বেশি ফলন পেতে একাধিক ফসল চাষ করছি।
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় দিন দিন কলা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। সাথী ফসল চাষ জমিতে বেশি আয় করার একটি কৌশল। লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা কলার জমিতে সাথী ফসল চাষ করছেন। কৃষি বিভাগ চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।